<< তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য ব্যক্তিগত: ওবায়দুল কাদের

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান নারী বিদ্বেষমূলক যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ‘ব্যক্তিগত’ বলে মত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরশনের মেয়র এবং দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ‘নারী বিদ্বেষমূলক’ যে বক্তব্য দিয়েছে এতে দল বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা তার ব্যক্তিগত মন্তব্য হতে পারে। আমাদের দল বা সরকারের কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য না। এ ধরনের বক্তব্য কেন সে দিল, অবশ্যই আমি বিষয়টা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’

ওবায়দুল কাদের এ সময় আরও বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব আবোল-তাবোল বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছেন। তারা ক্ষমতা দখলের যে দিবাস্বপ্ন দেখছেন তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।’

দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে— উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও স্বাধীনতাবিরোধীরা তৎপর। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএন‌পির গণতন্ত্র মানে কার‌ফিউ গণতন্ত্র, তামাশার গণতন্ত্র। তা‌দের বর্ণ‌চোরা গণত‌ন্ত্রে দে‌শের মানুষ আর ফি‌রে যা‌বে না।

তিনি বলেন, বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি ক্রমাগত মনগড়া বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে, যা তাদের দলের কাছেই নেতাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে।

খালেদা জিয়া না থাকলে আওয়ামী লীগ থাকবে না, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যে জনগণের মধ্যে হাস্যরসে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঠিকই থাকবে তবে বেগম জিয়া না থাকলে বিএনপি থাকবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

দেশে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন নয়- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা এখন আত্মবিশ্বাস হারানো এক পথভ্রান্ত রাজনৈতিক দল।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ সফলভাবে পালনের লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে সারাজাতিকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। ১৬ ডিসেম্বর সকালে সাভার ও বঙ্গবন্ধু ভবনে আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ১৭ ডিসেম্বর সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে দেশি-বিদেশি অতিথিদের নিয়ে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটায় শিখা চিরন্তন থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা করবে আওয়ামী লীগ।

মতবিনিময় সভা উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ,  বিএম মোজাম্মেল হক,মির্জা আজম,এসএম কামাল, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারাসহ ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

গত ৪ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক সাক্ষাৎকারে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নাতনি জাইমা রহমান সম্পর্কে ‘বিদ্বেষমূলক’ মন্তব্য করেন। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ৪o নারী অধিকারকর্মী বিবৃতি দিয়েছেন।

এছাড়া বেসরকারি নারী সংগঠন ‘নারীপক্ষ’ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৪ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক সাক্ষাৎকারে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জাইমা রহমান সম্পর্কে যে নোঙরা গালাগালি করেছেন, তা নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেন মির্জা ফখরুল

জিয়ার পরিবার নিয়ে দেওয়া তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে তার পদত্যাগের দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সরকারের তথ্য-প্রতিমন্ত্রীর একটি বিকৃত এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত নারী ও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহনকারী একজন ব্যক্তির এ ধরনের ঘৃণ্য ও কুরুচিপূর্ণ আচরণের প্রতিকার দাবি করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যক্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী যে দুর্বলতার মানুষই হোক না কেন একজন জাতীয় পতাকাধারী ব্যক্তির এ ধরনের মনোবৈকল্য উৎসারিত বিকৃতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হয়ে এই মুহূর্ত পর্যন্ত বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন। ঠিক তখনই তার পরিবারের একজন নারী সদস্য তথা পরিবারের বিভিন্ন জন সম্পর্কে এমন অশ্লীল ঘৃণ্য অপপ্রচার ইতিমধ্যেই নারী নেতৃত্বসহ দেশের সচেতন সব মহলের ঘৃণা কুড়িয়েছে।

অবিলম্বে তথ্য-প্রতিমন্ত্রীকে হীন রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিমূলক এই নারী ও বর্ণবিদ্বেষী বিকৃত মন্তব্য প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। অন্যথায় ভবিষ্যতে যথাসময়ে এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।